Tanvir Hossain

- August 28, 2017

ধর্ষণ_হ্রাসে_পর্দা_প্রথা
.
অনেকে পর্দা বলতে শুধু পোশাকের বিষয়টাকেই বোঝেন৷ তাই যখন কোন হুজুর বলে পর্দা করলে এ ধর্ষণ হত না তখন তারা এটা বিশ্বাস করতে চায় না। বস্তুত পর্দা বলতে শুধু পোশাক বা হিজাব পরাকে বুঝায় না। পর্দা বিষয়টা স্থান, কাল, পাত্র, পরিবেশ, মানসিকতা ইত্যাদির সাথে জড়িত। হিজাব পরে কেউ যদি পরপুরুষের সাথে ঘুরতে বের হয়, অথবা কোন পরপুরুষের সাথে অপ্রয়োজনে কথা বলে, দেখা করে, অথবা অভিভাবক ছাড়া এমন জায়গায় যায় যেখানে তার নিরাপত্তা নেই তাহলে সেক্ষেত্রে সে পর্দা করেনি বলে বিবেচিত হয় যদিও সে হিজাব পরেছে। একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন আমাদের দেশে বেশিরভাগ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে উপরিউক্ত কারনে। সুতরাং বলা যায় যদি পর্দা করা হয় তাহলে ধর্ষণের ঘটনা ৯০% কমে যাবে।
.
একটা সময় আমাদের সমাজে নারী-পুরুষদের অবাধ মেলামেশার সুযোগ কম ছিল। নারীদের মধ্যে প্রবল আত্মসম্মানবোধ ছিল। কোন পুরুষ তাঁর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাবে এটা তারা সহ্য করতে পারত না। তারা পরপুরুষের সাথে ঘরের দরজার আড়ালে দাড়িয়ে দরকারী কথা বলত। তারা ঘরের বাইরে পর্দা করে অভিভাবকসহ বের হত। পুরুষরাও পথেঘাটে নারীদেরকে উত্যক্ত করত না। তখন ধর্ষনের ঘটনা খুব কম ঘটতো।
.
এরপর আমাদের সমাজে নারী স্বাধীনতার নামে বেহায়াপনা শুরু হল। নারীদেরকে বুঝানো হল আধুনিক হতে হলে তোমাকে পর্দাপ্রথা বাদ দিতে হবে। অথচ পর্দাপ্রথা মেনেও উচ্চশিক্ষা অর্জন করা যায়, আধুনিক হওয়া যায়। নারীরা লজ্জাশীল বলে সবাই জানতো কিন্তু সিনেমায়, পত্রিকার পাতায় নারীদেরকে বেহায়াভাবে উপস্থাপন করা শুরু করল। পুরুষরা দেখল পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করতে নারীদের সে কি আকাঙ্ক্ষা। নারীরা রাস্তায় রাস্তায় তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করা শুরু করল। পুরুষরা নারীদেরকে ভোগ্য বস্তু ভাবা শুরু করল। নারীও যে মানুষ, মানুষ হিসেবে যে তাঁরও সম্মান আছে এ বোধটুকু পুরুষের মাঝ থেকে হারিয়ে গেল। তারা রাস্তাঘাটে মেয়ে দেখলেই লোলুপ দৃষ্টিতে তাকানো শুরু করল, যেন সিনেমা দেখছে। উত্যক্ত করা, অশ্লীল কথা-বার্তা বলা, কুপ্রস্তাব দেয়া যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেল। তথাকথিত আধুনিকতা এভাবে নারী-পুরুষ উভয়ের মানসিকতা নষ্ট করে ফেললো।
.
স্যাটেলাইট চ্যানেলে নাটক-সিনেমায় বিবাহ বহির্ভূত প্রেম-ভালোবাসাকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হল। অশ্লীল সিনেমা দেখে এমনকি বৃদ্ধের মনেও যৌন বিকৃতি বেড়ে গেল। কোলের শিশুও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পেল না। নাটক সিনেমা দেখে, উপন্যাস পড়ে অল্পবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের মনেও প্রেম জন্ম নিল। পাশের বাড়ির মেয়েটা বা সহপাঠী জরিনার জন্য সে আকর্ষণ অনুভব করল। প্রেমের টানে বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর সততা, চরিত্র, অতীত ইতিহাস এগুলো যাচাই-বাছাই করার গুরুত্ব উপেক্ষা করা হল। অনৈতিক সম্পর্ক বেড়ে গেল, মানুষ পশুর মত হয়ে গেল, সতীত্ব বলে কিছু থাকল না। স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা শুরু করল। দাম্পত্য জীবনে অশান্তি দেখা দিল, ডিভোর্সের হার বেড়ে গেল।
.
তথাকথিত আধুনিকতা শেষ পর্যন্ত নারীদেরকে পুরুষদের বাসায় পৌছে দিল। নারী স্বাধীনতা এখন গভীর রাতে পরপুরুষের বাসায় জন্মদিন পালন করা, বিয়ের লোভে রাত কাটানো। এগুলোর বিরুদ্ধে বললে আপনি হয়ে যাবেন সেকেলে। মাঝখান দিয়ে কিছু নারী সম্ভ্রম হারাচ্ছে। ইদানীং ধর্ষণের ঘটনাগুলো আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। কিছুদিন আগেও শুনতাম রাস্তা থেকে, বাসা থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। এখন দেখছি ধর্ষিতা স্বেচ্ছায় পায়ে হেটে ধর্ষকের বাসায় যায়। তাও আবার রাত বারোটায়, তিনটায়। পত্রিকা খুললেই ধর্ষণের ঘটনার ছড়াছড়ি। এরপরও যেসব নারীরা সম্পূর্ণ অপরিচিত লোকের বাসায় কোন অভিভাবক ছাড়া গভীর রাতে অবস্থান করেন তারা কি চান? এত গভীর রাতে অন্যের বাসায় আপনাদের কি এত মহৎ কাজ? নিজের ক্ষতি করে পরপুরুষের চরিত্রের পরীক্ষা নেয়াটা বোকামি নয় কি?
.
লেখাঃ Abu Nayeem

Thanked by: Tanvir Hossain

Comments