তাকদির বনাম স্বাধীন ইচ্ছা দুইটা বিষয়ে কী পরস্পর সামঞ্জস্য আছে?

আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন হলেন অনন্ত অসীম। তাঁর কোনো আদি অন্ত নেই। তিনি সময়ের ঊর্ধ্বে। সময় দ্বারা তিনি আবদ্ধ নন। বরং সময় তাঁরই সৃষ্টি এবং মহাবিশ্বকে তিনি সময়ের ফ্রেমে আবদ্ধ করেছেন।
.
সময়ের ফ্রেম বলতে মূলত ‘Present’ বা ‘বর্তমান’ এর ফ্রেম বোঝাচ্ছি। আমরা কখনোই বর্তমানকে অতিক্রম করে যেতে পারি না। আপনি প্রতি মুহুর্তে বর্তমানেই আছেন। কিছুক্ষণ আগের অতীতেও ফিরে যেতে পারবেন না, বর্তমানকে পাশ কাটিয়ে ভবিষ্যতেও চলে যেতে পারবেন না। ফিকশনগুলোতে সময় অতিক্রমের আজগুবি ঘটনা দেখানো হলেও এটাই ফ্যাক্ট। আমাদের জন্য সময় ধীরে বা দ্রুত যেতে পারে – সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু সময়ের ঊর্ধ্বে উঠে একে অতিক্রম করা আমাদের জন্য অসম্ভব।
.
তাহলে ভাবুন তো, সময়ের ঊর্ধ্বে কোনও একজন সত্ত্বার জন্য কি একই জিনিস খাটে? উত্তরটা সহজ – না, খাটে না। যখন সময়ই ছিল না তখনও আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন ছিলেন। তিনি আমাদেরকে সময় দ্বারা আবদ্ধ করেছেন কিন্তু তিনি সময়ের ঊর্ধ্বে বলে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত তাঁর কাছে একইসাথে বিরাজ করে। তাই আল্লাহ অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সবকিছু সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞান রাখবেন – সেটাই স্বাভাবিক।
.
এখন তিনি যদি আপনার ভবিষ্যত দেখে সেটা লিখে রাখেন তাহলে সেটা মোটেও আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে না, বরং আপনার নিজ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তই হবে। কারণ আপনি ভবিষ্যত সম্পর্কে জানেন না বলে একটু পর ডানে যাবেন নাকি বামে যাবেন সেটা আপনার নিকট সিদ্ধান্ত হিসেবেই আবির্ভূত হবে। আমরা বর্তমানের ফ্রেমে বন্দি বলে আমরা যে ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছু জানি না – এই না জানাই আমাদেরকে নিজেদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর জন্য এককভাবে দায়ী করে।
.
এই হল আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘Free will বা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি’ দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর আগে থেকে সবকিছু জানা থাকার একটি ব্যাখ্যা – তিনি সময়ের ঊর্ধ্বে, আমরা নই। বর্তমানের ফ্রেমে বন্দি আমাদের কাছে বিকল্প কাজগুলো সব অজানা Option বা সিদ্ধান্ত হিসেবেই আসছে। তাই আল্লাহ আগে থেকে জেনে থাকলেও আমাদের সমস্ত কাজের দায়ভার আমাদেরই। এখন কেউ বলতে পারে, স্রষ্টা চাইলে আমাদেরকে দিয়ে জোর করে শুধু ভালটাই করিয়ে নিতে পারতেন – কিন্তু তা হলে সেটা আর আমাদের Free will থাকত না।
.
তাহলে আল্লাহ আগে থেকেই জানেন বলে তিনি তো দুনিয়ার জীবন ছাড়াই সরাসরি জান্নাত বা জাহান্নাম – যার যেখানে ঠিকানা হবে সেখানে দিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তাহলে জাহান্নামীরা তো প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে যেত - তাদেরকে সুযোগ না দিয়েই কেন সরাসরি জাহান্নামে দিয়ে দেওয়া হল। আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন এই প্রশ্ন করার সুযোগ রাখলেন না। তিনি জানা সত্ত্বেও দুনিয়ার জীবন দিলেন।
.
তাই কিয়ামতের দিন আল্লাহর ফয়সালা হয়ে যাওয়ার পর কেউ বলবে না যে তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। বরং হাহাকার করে বলবে,
 .
“...যদি কোনরূপে একবার ফিরে যেতে পারি, তবে আমি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে যেতাম।” (সূরা যুমার, ৫৮)
লেখক ঃ তানভীর আহমেদ
(fb id: fb.com/abdullah.tanvir.ahmed)
ধন্যবাদান্তেঃ তানভীর
(fb id: fb.com/TanvirBD1971)

Comments

Popular posts from this blog

L’uomo Che Aveva Paura del Genere Umano (Riassunto)

বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র -ছাত্রীরা

Marriage Advices to You All (by_Tanvir_Sci)