মোল্লা বনাম নাস্তিকদের মাঝে কথোপকথন (A conversation between Molla vs Atheists)

-------------بسم الله الرحمن الرحيم---------------

মোহাম্মদপুরের কোন এক চায়ের দোকানে কিছু তরুণ বসে আলোচনা করছে)
১ম তরুণঃ তাহলে বুঝছ তো? আল্লাহ যদি থাকতই, তাহলে সমাজে কি গরীব থাকতো? ঐ লোকটার কি দোষ যে আল্লাহ তাকে গরীব করে বানাইছে?
 (কথাটা কানে যেতেই দাঁড়িয়ে পড়ল মোল্লা। ভাল করে খেয়াল করল তরুণকে। মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি, DON 2 এর শাহরুখ খানের মত ঝুঁটি বাঁধা চুল, চে গুয়েভারার গেঞ্জি গায়ে………যাকে বলা হচ্ছে, সে সাধারণ একজন তরুণ। তাদেরকে ঘিরে বসে আছে আরও কয়েকজন, সবাইকে ভার্সিটি পড়ুয়াই মনে হল…… বসল গিয়ে চায়ের দোকানে।)
উৎসুক শ্রোতা পেয়ে ১ম তরুণ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল……
মোল্লাঃ ভাই, আপনার যুক্তিটা তো বুঝলাম না। সমাজে গরীব আছে বলে স্রষ্টা নেই, এটা কেমন কথা হল?
১ম তরুণঃ স্রষ্টা থাকলে তিনি কি আর গরীব লোকদের কষ্ট দেখে চোখ বুজে থাকতেন? অবশ্যই তিনি তার সৃষ্টিকে কষ্ট দিতেন না।
 মোল্লাঃ এটা কোন কথাই হলনা। অনেক মানুষের অনেক টাকা পয়সা আছে, তারপরও তারা কষ্টে আছে। খালি গরীব হলেই কষ্ট, এটা ভুল। কষ্ট নাই, এমন কোন মানুষ পাইনি আমার জীবনে। কারো চেহারা নিয়ে কষ্ট, কারো টাক নিয়ে কষ্ট, কারো  GF কে না পাওয়া নিয়ে কষ্ট।
(……উৎসুক শ্রোতারা, আশেপাশের আরও কয়েকজন, যারা এতক্ষণ নাস্তিকতার কথা শুনছিল, কিন্তু পাল্টা যুক্তি দেখাতে না পেরে মনে মনে কষ্ট পাচ্ছিল, সবাই মনোযোগ দিল)
…আপনার লজিকটা ভুল। অনেকটা এইরকম,  NOKIA N8, N97 আর  6210 নিজেদের মধ্যে আলাপ করতেছে, “আমাদের মধ্যে যেহেতু বৈচিত্র্য আছে, সেহেতু NOKIA COMPANY বলে কিছু নাই”। এটা কোন কথা হল?
(বিন্দুমাত্র না দমে…)
১ম তরুণঃ কিন্তু আল্লাহ আছে, এই প্রমাণ কেউ করতে পারেনি, এর কোন প্রমাণই নেই, আপনার কাছেও প্রমাণ নেই, খালি অন্ধ বিশ্বাস।
 মোল্লাঃ (দৃঢ়ভাবে) জী না, আমার কাছে প্রমাণ আছে। বরং স্রষ্টায় না বিশ্বাস করাটাই অন্ধ বিশ্বাস।
 পাশ থেকে কেউ একজন : “ কিভাবে?? Zakir Nayek এর logic দিবেন তো? ওইটা তো Zakir Nayek না, Joker Nayek, ওর logic এর অনেক flaw আছে।’’
মোল্লাঃ আমি জাকির নায়েকের logic দিবনা।বরং আমি আপনাকে এমন প্রমাণ দিব যা আমদের বাস্তবতা (Reality)কে পর্যবেক্ষণ করে নেয়া, যা চূড়ান্তভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করবে।
(এবার তারা কিছুটা উৎসাহিত হল)
দুইজন (সমস্বরে) : কিভাবে?
মোল্লাঃ দেখেন, আমাদের এই মহাবিশ্বটার যদি শুরু থাকে, তবে এই প্রশ্নটা সামনে চলে আসে যে, তা কিভাবে শুরু হল?
১ম তরুণঃ কিন্তু মহাবিশ্ব তো শুরু নাও হতে পারে, অনন্তকাল  ধরেও তো চলে আসতে পারে?
মোল্লাঃ না, মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে চলে আসতে পারেনা, এর অবশ্যই অবশ্যই শুরু আছে।
 ১ম তরুণঃ আপনি এত Sure হলেন কিভাবে?
 (বাকিরা উৎসাহী নয়নে চেয়ে আছে…)
মোল্লাঃ মনে করেন, আপনি বাসে উঠার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার সামনে আরও ৫ জন। আপনি কয়জনের পর বাসে উঠবেন?
কেউ একজনঃ ৫ জনের পর।
 মোল্লাঃ যদি আপনার সামনে ১০ জন থাকে, তাহলে??
১ম তরুণঃ ১০ জনের পর।
 মোল্লাঃ কিন্তু যদি আপনার সামনে অসীম সংখ্যক লোক দাঁড়িয়ে থাকে? তাহলে, কয়জনের পর বাসে উঠবেন?
 (ব্যাপারটা হজম করতে সময় লাগল, কেউ কথা বলছেনা)
মোল্লাঃ তারমানে আপনি কোনদিন বাসে উঠতে পারবেন না। কারণ আপনার সামনের লাইন কোনদিনই শেষ হবেনা (যেহেতু অসীম)। সুতরাং আপনার serial কখনই আসবেনা। এখন এই মহাবিশ্ব যদি অনন্তকাল ধরে চলে থাকে, তবে একটা প্রশ্ন করি, পৃথিবীর জন্ম কবে হয়েছে? উত্তর হবে, পৃথিবীর  জন্ম এখনও হয়নাই, কখনই হবেনা, কারণ পৃথিবীর জন্ম হওয়ার আগে অসীম সংখ্যক ঘটনা ঘটতে হবে। আর অসীম মানে যার কোনও শেষ নাই, সেই ক্ষেত্রে পৃথিবীকে অনন্তকাল জন্ম হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, যেরকম আপনি লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বাসে উঠার জন্য। আপনার সামনের লাইন কোনদিনও শেষ হবেনা, আপনিও বাসে উঠতে পারবেন না, পৃথিবীর সামনের লাইনও কোনদিন শেষ হবেনা। এখন মনে করি, পৃথিবীর সামনে সূর্য দাঁড়িয়ে আছে, জন্ম হওয়ার অপেক্ষায়, তারও কোনদিন জন্ম হবেনা, কারণ তার সামনের লাইনও তো অসীম! অসীমের সাথে ১ যোগ করলেও অসীম, ১ বিয়োগ করলেও অসীম, তাহলে আগের ঘটনাগুলোই যদি এখনও শেষ না হয়, তাহলে আমি, আপনি , পৃথিবী, সূর্য  কোন কিছুরই অস্তিত্ব সম্ভব হতনা। অবশ্যই একটা ঘটনার মাধ্যমে মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে, তারপর ১,২,৩,৪, করে করে ঘটনাগুলো ঘটতে আরম্ভ করেছে……এখন আমি আপনি চায়ের দোকানে আলাপ করছি!
মাঝখান থেকে একজনঃ ভাই, আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন কি?
মোল্লাঃ কঠিন হয়ে গেল? আচ্ছা, মনে করেন, আপনি শত্রু পক্ষের কাউকে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি করবেন। আপনার উপর ৫ জন BOSS আছে, পর্যায়ক্রমে যাদের অনুমতি পেলে আপনি গুলি করবেন। এখন আপনাকে যদি অসীম সংখ্যক BOSS এর permission নিতে হয়, তাহলে আপনি কখন গুলি করবেন? আপনার permission নেয়াও শেষ হবেনা, গুলিও কোনদিন করতে পারবেন না। আপনার বাসায় যদি অসীম সংখ্যক মালামাল থাকে তাহলে কোনদিনই বাসা change করতে পারবেন না। কারণ মালামাল নামানো কোনদিনই শেষ হবেনা।
(চায়ের দোকানদারকে)…… ভাই, এক গ্লাস পানি দাও তো…
তারমানে কোনও একটা ঘটনা যদি ঘটে, বুঝতে হবে যে তার আগে অসীম সংখ্যক ঘটনা ঘটেনি, ঘটেছে সীমিত সংখ্যক ঘটনা, আর সীমিত ঘটনা মানেই, একটা শুরু আছে, তারপর ঘটনা গুলো ঘটতে ঘটতে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে। সুতরাং মহাবিশ্বের অবশ্যই শুরু আছে। যেরকম ৫ জনের বা ১০ জনের পর আপনি বাসে উঠতে পারছেন, সেইরকম ৫টা, ১০টা বা ১০০টা ঘটনা ঘটার পর পৃথিবীর জন্ম হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণ হয়, মহাবিশ্বের শুরু আছে, এটা অনন্তকাল ধরে চলে আসা কোনও মহাবিশ্ব নয়।
(বিংশ শতাব্দীর শুরুতে গণ্ডমূর্খ নাস্তিক INTELLECTUAL দের, যে যুক্তি, উঠতি তরুণ সমাজের মাঝে নাস্তিকতার হাওয়া যুগিয়েছিল, তার এরকম পতন দেখে  হতবাক হয়ে গেল তরুণগুলো)
 (একটু নমনীয় সুরে……)
১ম তরুণঃ আপনার কথা ঠিক আছে… (অজানা ভয়ে…… আমতা আমতা করে…) কিন্তু এতেও প্রমাণ হয়না যে স্রষ্টা আছে।
 মোল্লাঃ এখন অবশ্যম্ভাবী প্রশ্নটা চলেই আসে, তাহলে মহাবিশ্ব কিভাবে শুরু হল, মানে সৃষ্টি হল। সে কি নিজেকে নিজে তৈরি করেছে, অর্থাৎ শুন্য থেকে নিজেই নিজেকে তৈরি করেছে নাকি অন্য কেউ তাকে তৈরি করেছে?
১ম তরুণঃ আপনার যুক্তিটা কি? Stephen Hawkings কিন্তু বলেছেন যে, কোন স্রষ্টা ছাড়াই এই মহাবিশ্ব নিজেকে নিজে তৈরি করেছে।
 মোল্লাঃ (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে…) Grand Design বইটার কথা বলছেন তো? ঐ বইয়ের সমালোচনার জবাবে হকিংস নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন যে,
“ স্রষ্টা নেই, এ কথা কেউ প্রমাণ করতে পারবেনা। কিন্তু বিজ্ঞান স্রষ্টাকে অপ্রয়োজনীয় বলে রায় দিয়েছে।’’
সুতরাং, ঐ বই থেকেও প্রমাণ হয়না যে স্রষ্টা নেই। বরং লেখক নিজেই বলছেন যে, স্রষ্টাকে আমাদের দরকার নেই। দরকার নেই, আর স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই, দুইটা তো এক জিনিষ না। আর তাছাড়া  বইটাতে বোকামিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
(ব্যাপারটা হজম করতে না পারলেও, এই মোল্লার দৌড় যে শুধু মসজিদ পর্যন্ত না, তা তারা ভালই বুঝতে পেরেছে।)
মোল্লাঃ তা ভাই, আপনার নামটা যেন কি?
১ম তরুণঃ রুম্মান।
 মোল্লাঃ চা চলবে ভাই?…… এই মামা, চা দাও সবাইকে……
রুম্মানঃ যা বলছিলেন, হকিংস……
মোল্লাঃ ও, হ্যাঁ। উনি বলেছেন যে, Gravityর কারণে এ মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে শূন্য থেকে তৈরি করতে পারে।
 রুম্মানঃ তো, এতে সমস্যা কোথায়? Virtual Gravitons এর কারণে এই Gravity তৈরি হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে মহাবিশ্বের সৃষ্টি, শূন্য থেকে।
 মোল্লাঃ সমস্যা আছে। Gravity একটা গাণিতিক সমীকরণ। দুইটা বস্তুর মাঝে ভর অনুপাতে আকর্ষণ বুঝাতে এটা ব্যবহৃত হয়। তো মহাবিশ্ব যদি শূন্য থেকেই আসে, তাহলে সেখানে কোন বস্তু ছিলনা, তো Gravity  কোত্থেকে আসল সেই সময়? এইখানে আপনি বলছেন যে Virtual Gravitons ছিল, তো সেই প্রশ্ন এসে যায়, এরা কি অনন্তকাল ছিল? অনন্তকাল ধরে থাকতে পারেনা। আর একটা জিনিষ নাই, ছিলনা, আবার সেটা হইল, আবার নাই আবার হইল, এইটাত পুরাই irrational কথাবার্তা। আপনার সামনে আমি দাঁড়াইয়া আছি, আবার গায়েব হয়ে গেলাম, আবার দাঁড়াইয়া আছি, আবার গায়েব হয়ে গেলাম… science দেখি সিন্দাবাদের দৈত্যের মত কথা বলছে, Infact তার চেয়েও আজগুবি কথা বলেছে হকিংস। এই কারনেই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী বেরনেস গ্রিনফিল্ড হকিংস কে তালিবানদের সাথে তুলনা করে বলেছেন যে, “যা খুশি তারা বলতে পারে, তালিবানদের মত তারা যখন বলে আমাদের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে, তখন তা আসলেই অস্বস্তিকর।’’ মানে Comment করতে তো আর পয়সা লাগেনা। science বুঝেনা এরকম নাস্তিকরাই আসলে হকিংস রে নিয়ে কাউ কাউ করে। Richard Dawkins এইরকম একজন। আমাদের দেশের নাস্তিকগুলাও না বুইঝা ফালাফালি করে। অনেক বিজ্ঞানীই হকিংসের সাথে একমত না।
….. আর gravity না হয় gravitons থেকে হইল, যেটার কারণে মহাবিশ্ব হইল, তাহলে gravitons কোত্থেকে হইলো? দ্বিতীয় আরেকটা প্রশ্ন হল, হকিংস শূন্য বলতে যে Quantum vacuum বুঝিয়েছেন, তা কিন্তু আসলেই শূন্য (nothing) না। সেখানে energy বিরাজ করত। এখন, energy আর gravity এই মহাবিশ্বেরই অংশ। হকিংসের কথার সাদামাটা মানে হল, আপনি নিজেকে তৈরি করেছেন শূন্য থেকে, নিজেকে তৈরি করার আগে আপনার হাত আগে থেকেই ছিল(যেটা আপনারই অংশ), তারপর সেই হাত আপনাকে তৈরি করেছে। তো প্রশ্ন হল, হাত কিভাবে ছিল? এটা একটা অবাস্তব কথাবার্তা।
 মহাবিশ্বের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত একটা জিনিষ, মহাবিশ্ব তৈরি হওয়ার আগে থেকেই ছিল, এরপর মহাবিশ্বকে তৈরি করে সে নিজেই মহাবিশ্বের পেটের ভেতর  ঢুকে পড়েছে, Hw Funny???? Seems like fairy tales!! অর্থাৎ আপনি আগে থেকেই ছিলেন,এরপর আপনার মাকে আপনি বানাইছেন, বানাইয়া তার পেটের ভেতর ঢুকে বসে আছেন, আর মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি নিয়ে বেঁচে আছেন। লুল, লুল মজা পাইলাম।
(পুরা দোকান মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে যাচ্ছে, কেউ বুঝতেছে, কেউ বুঝতেছেনা, তবে সাধারণ জনগণ চাচ্ছে মোল্লাই জিতুক। চায়ে চুমুক দিয়ে………)
এর চেয়ে অবাস্তব কথা আর কি হতে পারে? এ থেকেই বুঝা যায়, মহাবিশ্ব শূন্য থেকে আপনা আপনি তৈরি হয়েছে, এরকম কোন সত্য প্রমাণ বিজ্ঞানের কাছে আদৌ নেই। এটা শুধু থিওরি হিসেবে হকিংসের কল্পনায় (Fantasy) আছে, যার বাস্তব ভিত্তি নেই। না হলে কি আর হকিংস সাহেব বলতেন, “স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়”
এজন্যই আল্লাহ কুরআনে  সুরা আত তুরে বলেছেন, “ তারা কি এমনি এমনিই তৈরি হয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই নিজেদের স্রষ্টা? না তারা নভোমডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করেনা।’’
রুম্মানঃ (ব্যঙ্গ করে), এ কথা আপনি মহাজ্ঞানী বুঝলেন, আর হকিংস বুঝলনা??
মোল্লাঃ (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে) হকিংস অজ্ঞানান্ধ (বিজ্ঞানে অন্ধ= অজ্ঞানান্ধ)। একজন রিকশাওয়ালাও তার চেয়ে rational। এক রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিলো, “ চাচা, আল্লাহ আছে, এটা বুঝলেন ক্যামনে?” কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি উত্তর দিলেন,
“ বাবারে, আমি প্যাডেল চাপি, চাক্কা ঘুরে, আর এতবড় দুনিয়া ঘুরতাছে, প্যাডেল তো কেউ একজন মারতাছে……”
হকিংস সাহেবের এই বোধ বুদ্ধিটাও নাই। হাহাহাহাহা, দেখেন না, এখন কমেডি শোতে  অভিনয় করা শুরু করেছেন! এদের ব্যাপারেই আল্লাহ কুরআনে সুরা আল আরাফে বলেছেন, “ আর আমি সৃষ্টি করেছি দোজখের জন্য বহু জিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করেনা, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখেনা, তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শুনেনা। তারা চতুষ্পদ জানোয়ারের মত, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, উদাসীন।’’
২য় তরুণঃ তাহলে কি দাঁড়ালো? মহাবিশ্ব অসীম নয়, এর শুরু আছে। শুরুটা সে নিজে নিজে করেনি। তারমানে অবশ্যই কেউ একজন এই মহাবিশ্বকে শুরুতে সৃষ্টি করেছেন। ……(কিছুক্ষণ ভেবে) কিন্তু একটা সমস্যা তো রয়েই যাচ্ছে। তাহলে ঐ স্রষ্টা আসল কোত্থেকে? উনাকে কে বানাইছে?
 (মোল্লাকে আটকানো গেছে ভেবে কতগুলো চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। বাকিরা দম বন্ধ করে ফেলল)…………

চায়ে ধীরেসুস্থে  চুমুক দিল মোল্লা। সবাই উৎসুক চোখে চেয়ে আছে।)
 পাশ থেকে একজন খোঁচা মেরে বললঃ এটা তো শয়তানের প্রশ্ন। তুই তো শয়তান হয়ে গেলিরে।
(হাসির রোল উঠল…)
মোল্লাঃ স্রষ্টাকে যদি অন্য কেউ বানায়, তাহলে প্রশ্ন আসে, তাকে কে বানাল? সেই স্রষ্টার স্রষ্টা কে? এইভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় স্রষ্টার স্রষ্টা কে? এবং এভাবে ব্যপারটা আবার অসীম পর্যন্ত চলতে থাকবে। একটু আগেই কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি, কোন অসীম সংখ্যক ঘটনা সম্ভব নয়। তারমানে হোল, এই মহাবিশ্বের যিনি স্রষ্টা, তার কোন স্রষ্টা নেই।
রুম্মানঃ তাহলে তিনি অস্তিত্বে আসলেন কিভাবে? তিনি কি নিজেকে নিজেই বানিয়েছেন?
মোল্লাঃ তাও সম্ভব নয়। একটা জিনিষ নাই, সে আবার নিজেকে নিজে কিভাবে বানাবে? আর নিজে যদি নিজেকে বানায়, তারমানে, নিজেকে বানানোর আগে তিনি ছিলেন না। নিজেকে যখন বানালেন তখন থেকে তার শুরু, তো কি দিয়ে বানালেন? আর শুরু মানেই তিনি সীমিত। আর তাকে যদি কেউ বানায়, তা নিজেই নিজেকে বানাক আর অন্য কেউ তাকে বানাক, এখানে physical properties চলে আসে। physical properties মানে তিনি নিয়ন্ত্রিত, তার উপর বৈশিষ্ট্য আরোপ করা হয়েছে, তাকে অন্য কারো ইশারায় চলতে হয়, তিনি স্বাধীন না। অথচ স্রষ্টা হতে হলে তাকে হতে হবে নিয়ন্ত্রণমুক্ত, স্বাধীন এবং অনির্ভরশীল। আর মূল কথা হল, একটা জিনিষ নাই, সে আবার নিজেরে কিভাবে, কি দিয়ে বানাবে? শূন্য থেকে আপনা আপনি কিছু হয়না, এটা তো আমরা একটু আগেই আলোচনা করলাম।
 রুম্মানঃ তাহলে স্রষ্টা আসল কোথা থেকে?
মোল্লাঃ তিনি অসৃষ্ট। তিনি কোথাও হতে আসেন নাই। তিনি আগে থেকেই ছিলেন, চিরকাল থাকবেন।
(গুঞ্জন উঠল ভিড়ের মধ্যে, “এটা কি হল, বুঝলাম না”…… “অসৃষ্ট মানে?”…… “তাহলে মহাবিশ্বের অসৃষ্ট হতে সমস্যা কোথায়……?”)
(কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল মোল্লার।)
মোল্লাঃ আমার বক্তব্যটা একটু গুছিয়ে বলি। মহাবিশ্বকে study করে আমরা বুঝলাম যে তার একজন স্রষ্টা আছে, তাইনা?
(আশপাশে তাকিয়ে তেমন একটা support পেলনা মোল্লা। দুই একজন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল)

মহাবিশ্ব, স্রষ্টা ছাড়া সম্ভব না। এখন এই স্রষ্টাকে, হয়, কেউ তৈরি করেছে, না হয় তিনি নিজেকে নিজে তৈরি করেছেন। এ দুইটা বাদ দিলে মাত্র একটাই option থাকে। আর তা হল স্রষ্টা অসৃষ্ট। এর বাইরে আর কোন option নাই। প্রথম দুইটা point যে ভুল, তা আমি আলোচনা করেছি। আর বাকি একটাই option থাকে যে, তিনি একজন অসৃষ্ট স্রষ্টা (uncreated Creator)। তিনি যদি অসৃষ্ট (uncreated) না হন, তাহলে তিনিও ‘সৃষ্টি’ (created) হয়ে যান। আমাদের বুঝতে হবে যে, ‘স্রষ্টা’ (creator) আর ‘সৃষ্টির’ (created) মধ্যে পার্থক্য আছে। সৃষ্টি মানেই সীমাবদ্ধতা(limitation), নির্ভরশীলতা(dependency), দুর্বলতা(weakness)। কিন্তু স্রষ্টা এসকল সীমাবদ্ধতার ঊর্ধে। এজন্যই স্রষ্টাকে সৃষ্টি করা যায়না। তাকে হতে হবে অসৃষ্ট (uncreated)।
 (এতক্ষণে কয়েকজন বুঝল, কিন্তু প্রশ্ন শেষ হয়নি)
রুম্মানঃ মহাবিশ্বের  অসৃষ্ট হতে সমস্যা কোথায়? আর স্রষ্টার যে বৈশিষ্ট্য আপনি বলেছেন, তা তো কল্পনায়ও আনতে পারছিনা। পুরোপুরি বোধগম্যও হচ্ছেনা!
মোল্লাঃ মহাবিশ্বের ব্যপারটা তো বললামই, সে সীমিত(finite), সে অস্তিত্বের জন্য নির্ভরশীল। আর যে অস্তিত্বের জন্য অন্য কারো উপর নির্ভরশীল, সে তো সৃষ্টি (created)। এজন্যই তো সে অসৃষ্ট (uncreated) নয়, তার একজন স্রষ্টাকে দরকার, কিন্তু স্রষ্টার অন্য কোন স্রষ্টাকে দরকার নেই। আর স্রষ্টার বৈশিষ্ট্য বোধগম্য হচ্ছেনা, স্বাভাবিক। স্রষ্টার reality আর আমার আপনার reality এক না। একটা unknown reality কে আপনি known realityর সাথে match করাতে পারবেন না।
২য় তরুনঃ বুঝলাম না।
মোল্লাঃ মনে করেন আপনি কোনদিন আমেরিকার সাদা চামড়ার মানুষ দেখেন নি। এখন কেউ যদি আপনাকে এসে বলে, আমেরিকার মানুষের চামড়া সাদা, তো, আপনি কি বুঝবেন? আপনি বলবেন, দুধের মত সাদা? সে বলবে, না লাল সাদা। আপনি হয়ত বলবেন, দুধের মধ্যে আলতা দিলে যেরকম হয়, সেরকম?
(চায়ে চুমুক দিয়ে মোল্লা দেখল চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। পাশে রেখে দিল)
মোদ্দা কথা হচ্ছে, একটা অজানা reality সম্পর্কে যদি আপনাকে এসে বলা হয়, আর আপনি যদি তা sense করতে না পারেন, তবে কোনদিনই বুঝবেন না ঐ reality কেমন। ঐ reality বুঝতে হলে আপনাকে ঐ reality তে অবস্থান করতে হবে। স্রষ্টার reality আমাদের বাইরের reality, যা আমরা কখনই বুঝবনা। এজন্যই, হাদিসে, আল্লাহ কেমন, কিভাবে কাজ করেন, কেমনে থাকেন এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ একটা অজানা reality সম্পর্কে চিন্তা করতে গিয়ে আমরা শুধু fantasy নিয়ে পড়ে থাকব……এ কারনে আমরা মহাবিশ্বকে study করে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারি, কিন্তু তিনি কেমন, কিভাবে থাকেন, কিভাবে কাজ করেন, তা প্রমাণ করতে পারিনা, এটা আমাদের আয়ত্তের বাইরে।
মাঝখান থেকে একজনঃ ও, সেজন্যই বুঝি স্রষ্টার কোন মূর্তি থাকতে পারেনা! ছবি থাকতে পারেনা? কারণ, তাকে যদি নাই দেখলাম, তার বাস্তবতা যদি নাই বুঝলাম, তাহলে তার মূর্তি বানালে তো তাঁর উপর মিথ্যা আরোপ করা হয়। তাকে তো দেখিইনাই কোনদিন, মূর্তি বানাব কেমনে? মূর্তি তো বানাব আমার কল্পনা দিয়ে, কিন্তু সেটা তো আর স্রষ্টা নয়!
(প্রশংসার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল মোল্লা, ভাবল, “নাহ, সব নাস্তিক গাধা না।”)
মোল্লাঃ Exactly! আপনি সঠিক point টাই ধরেছেন। এ কারণেই ইসলাম বলেছে স্রষ্টার সাথে এ মহাবিশ্বের কোন কিছুর তুলনা করা যায়না। তিনি অতুলনীয়। তাই, মূর্তি বানালে স্রষ্টার উপর মিথ্যা আরোপ করা হয়।
(রঙ্গমঞ্চে এবার নতুন একজন আবির্ভূত হলেন।)
তিনি বললেনঃ তার মানে, আপনি বলতে চাচ্ছেন, স্রষ্টা unlimited এবং independent।
(মোল্লা ঘুরে তার দিকে তাকাল। মাঝবয়সী ভদ্রলোক, এক কোণায় বসে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছিলেন এতক্ষণ। এঁর কাঁচাপাকা চুলও ঝুঁটি বাঁধা, চওড়া কপাল, ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি, ফুলরীমের চশমা সেইরকম একটা ভাব এনে দিয়েছে চেহারায়…… মোল্লা বুঝল, tough guy…… মজাটা শুরু হবে এখন……)
মোল্লাঃ জী, স্রষ্টা unlimited এবং independent।
(মৃদু হাসলেন ভদ্রলোক)
মাঝবয়সী বাবুঃ আপনি কি quark এর কথা শুনেছেন? quark কে কিন্তু আমরা প্রকৃতিতে আলাদাভাবে ……মানে স্বাধীনভাবে বিচরণশীল পাইনা। সুতরাং একে আপনি limited বলতে পারবেন না। আবার একে নিয়ন্ত্রণও করা যায়না,মানে অন্য কেউ ওর উপর খবরদারি করতে পারেনা, সুতরাং একে independent বলতে পারেন। তাহলে কি বলতে চাচ্ছেন, quarkই আপনার আল্লাহ?? (হা হা হা)
মোল্লাঃ আপনার এই কথাটাই Atheist Bangladesh Group এর Admin আমাকে বলেছিল। তখন আমি quark সম্পর্কে জানতাম না। তাই একটু ধোঁকায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখি, (হাত দিয়ে মাছি তাড়াবার ভঙ্গি করল মোল্লা)। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, quark কে laboratory তে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, এর ভর আছে, এর ঘূর্ণন আছে। সুতরাং একে আপনি independent বলতে পারেন না। আর ধারণা করা হয়, big bang এর শুরুতে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে এরা প্রকৃতিতে বিরাজ করেছিল, সুতরাং ‘unlimited’ একটা জিনিষ  ‘limited’ মহাবিশ্বে বিরাজ করতে পারেনা। আপনি আমার আলোচনা এতক্ষন শুনে থাকলে বুঝবেন।
মাঝবয়সী বাবুঃ আল্লাহর ও তো বৈশিষ্ট্য আছে, তিনি কি জানি……(মনে করার ভান করলেন) আর রহমান, আর রহিম, বেগারা, বেগারা, তাহলে তাকে dependent আর limited বলছেন না কেন?
(ব্যাটার নির্বুদ্ধিতায় বিরক্ত হল মোল্লা, ভাবল, “গাধা কি আর গাছে ধরে?” চেহারায় ফুটে উঠল বিরক্তির ছাপ)
মোল্লাঃ উনি যে রহমান, রহিম এগুলা উনার personality, এগুলা কোন physical বৈশিষ্ট্য না। quark এর বৈশিষ্ট্যগুলা physical বৈশিষ্ট্য, personality না। আর ফিজিক্যাল বৈশিষ্ট্য মানেই এগুলো আপনার উপর আরোপ করা হয়েছে, তার মানে আপনি independent না, আপনি খাঁচার ভেতর অচিন পাখি। আপনার হাত দেড় ফুট লম্বা, এটা physical বৈশিষ্ট্য, কিন্তু আপনি মানুষের সাথে ভাল আচরণ করেন, এটা আপনার personality, physical property কাউকে limited করে তোলে কিন্তু personality কাউকে limited করেনা।
(একটু যেন দমে গেলেন ভদ্রলোক)

মাঝবয়সী বাবুঃ কিন্তু……সবপারে, অর্থাৎ Omnipotent একজন স্রষ্টার কিন্তু সমস্যা আছে। আত্মবিরোধের সমস্যা।
(মোল্লা বুঝতে পারল অবশ্যম্ভাবী প্রশ্নটা এবার ধেয়েই আসছে……)
মাঝবয়সী বাবুঃ বলেন, আল্লাহ কি এমন কোন পাথর তৈরি করতে পারেন, যেটা উনি ধ্বংস করতে পারেন না? আপনি যদি বলেন, পাথর তৈরি করতে পারে, তাইলে তিনি ধ্বংস করতে পারবেনা, আর যদি বলেন এমন পাথর তৈরি করতে পারেন না, তাইলে তো আর এই স্রষ্টা সবকিছু পারেনা। দুইদিকেই সমস্যা। আত্মবিরোধ, সুতরাং আল্লাহ সবকিছু পারেন না!
(সবগুলা চোখ এখন মোল্লার দিকে)
মোল্লাঃ এটা একটা logical প্রশ্ন, রাইট?
মাঝবয়সী বাবুঃ (মৃদু হেসে) হ্যাঁ।
মোল্লাঃ logic সবসময় একটা premise এর উপর ভর করে চলে। এই প্রশ্নটার premise হল, “আল্লাহ সবকিছু পারেন”। এই কথাটার উপর ভিত্তি করে প্রশ্নটা করা হয়েছে। আমি আপনার প্রশ্নের জবাব দিব, তার আগে বলেন, আল্লাহ সবকিছু পারে, এটা আপনাকে কে বলেছে?
মাঝবয়সী বাবুঃ তারমানে, আল্লাহ সবকিছু পারেনা?
মোল্লাঃ না, আল্লাহ সবকিছু পারেনা।
(বোম্ব ফাটল যেন। উল্লাসধ্বনি শোনা গেল নাস্তিক শিবির থেকে। এই স্বীকারোক্তিতে মাঝবয়সী বাবুও হতভম্ব হয়ে গেলেন। আস্তিকরা দুরুদুরু বুকে তাকিয়ে আছে মোল্লার দিকে। মোল্লা চুপচাপ, শান্ত।)
মাঝবয়সী বাবুঃ তাহলে আপনার আল্লাহ সবকিছু পারেনা? হাহা (ব্যঙ্গ করে), তাহলে তিনি স্রষ্টা হওয়ার যোগ্যতা হারালেন। এরকম অযোগ্য স্রষ্টার দরকার নেই।

(রুম্মান চুপচাপ, সে নিবিড়ভাবে তাকিয়ে আছে মোল্লার দিকে। বুঝতে পারল, এত সহজে ঘায়েল করা যাবেনা মোল্লাকে)
মোল্লাঃ আল্লাহ সবকিছু পারেন
না। তিনি ঘুমাতে পারেন না, খেতে পারেন না,
মিথ্যা কথা বলতে পারেন না, অবিচার করতে
পারেন
না। কারণ এ কাজগুলো যদি তিনি করেন, তবে
তিনি আর
স্রষ্টা থাকেন না। এ কাজগুলো যদি তিনি পারেন,
তবে
তিনিও আমাদের মত ঘুম, খাওয়া দাওয়া স্বার্থপরতা
এইসবের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন। আর স্রষ্টার
পক্ষে এই
ধরনের কাজ সাজেনা। সব কিছু যদি উনি পারেন,
তাহলে উনার পক্ষে স্রষ্টা হিসেবে টিকে থাকা
অসম্ভব হয়ে পড়বে, আমি আপনি না হয় স্বার্থ
হাসিলের
জন্য মিথ্যা বলি, ক্লান্ত হলে ঘুমাই, কিন্তু স্রষ্টার
মিথ্যা
বলার দরকার কি? ঘুমানোর দরকার কি? তিনি এসব
দুর্বলতা
থেকে মুক্ত বলেই তিনি স্রষ্টা। এই ব্যপারে কুরআনে
আয়াতুল কুরসিতে বলা আছে। এইসব কাজ স্রষ্টার
বৈশিষ্ট্যের সাথে সাঙ্ঘর্শিক। তিনি এই ধরনের
Ungodly
কাজ করতে পারেন না। আর আল্লাহ নিজেও কখনও
দাবি
করেন নি যে, তিনি “সব পারেন” বরং তিনি
বলেছেন,
“সবকিছুর উপর তিনি ক্ষমতাবান।’’ মানে সবকিছুকে
control
করার, destroy করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে।
(একটু ইতঃস্তত ভাব যেন দেখা গেলো মাঝবয়সী
বাবুর
মাঝে, তবে হার মানতে নারাজ তিনি)
মাঝবয়সী বাবুঃ কিন্তু আমার প্রশ্নের সাথে তো
আপনার
উত্তরের কোন মিলই নাই। আমি কি জিজ্ঞাসা
করলাম,
আর আপনি কি উত্তর দিলেন?
মোল্লাঃ আমি ভেবেছিলাম, আপনি জ্ঞানী,
বুঝে
নিবেন। (দুইপাশে হাত ছড়িয়ে) যাই হোক, ঐ যে
বলছিলাম, প্রশ্নটার premise ভুল। এই প্রশ্নে ধরা হয়েছে
যে,
“স্রষ্টা সবকিছু পারে”। এই ভিত্তিতে জিজ্ঞাসা
করা
হয়েছে, “স্রষ্টা কি এমন কোন পাথর বানাতে পারে
যা
তিনি ধ্বংস করতে পারেন না?’’ premise ভুল এই
কারনে
যে, আমি একটু আগেই বললাম, স্রষ্টা আসলে সবকিছু
পারেনা, উনি Ungodly জিনিস করতে পারেন না।
দ্বিতীয়ত, এই প্রশ্নটার structure এও ভুল আছে। এই
প্রশ্নটা
logical প্রশ্ন। একটা Universal truth কে base ধরে এই
method এ
logic দাঁড় করান হয়। এই method কে বলা হয় logical
deduction
method। কিন্তু এই প্রশ্নটায় universal truth কে base ধরে
করা
হয়নি।
(একটু চিন্তা করে)
যেমন ধরুন, ‘মানুষ মরনশীল’ এটা একটা সার্বজনীন সত্য।
এটাকে premise ধরে প্রশ্ন করা হল, ‘রহিম একজন মানুষ,
রহিম
কি মরণশীল?’………… কিন্তু আপনি যে প্রশ্ন করেছেন
তাতে
বলা হয়েছে, এমন কোন বস্তু তৈরি করা যাবে
কিনা, যা
স্রষ্টা ধ্বংস করতে পারেনা? আমাদের আশপাশে
এমন
কোন উদাহরন নাই যেখানে কেউ কোন কিছু বানাল
অথচ
তা নষ্ট করতে পারেনা। আপনি যদি একটা গ্লাস
বানান,
আপনি জানেন, কত জোরে আঘাত করলে তা
ভেঙ্গে
যাবে। আপনি একটা কম্পিউটার বানালে জানেন
যে,
পানিতে চুবাইলে এইটা শেষ। এটা কখনই সম্ভব না
যে,
কেউ কোন একটা জিনিসকে তৈরি করেছে অথচ তা
ধ্বংস করতে পারছেনা। তৈরি করার সাথে সাথেই

জিনিষটার দুর্বলতা এবং নাড়ী নক্ষত্র স্রষ্টার জানা
হয়ে যায়, যেভাবে আপনি জানেন আপনার তৈরি
করা
মেশিনটা কয়দিন সার্ভ করবে, কি করলে তা নষ্ট হয়ে
যাবে। এটা স্রষ্টার দুর্বলতা নয়, বরং সৃষ্টির,
স্রষ্টাকে
অতিক্রম করতে না পারার অক্ষমতা!
(ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেলেন মাঝবয়সী বাবু। এ
প্রশ্নের এরকম উত্তর তিনি জীবনেও শুনেন নি।
মোল্লা
যেভাবে প্রশ্নটার সার্জারি করে আবর্জনার স্তূপে
ছুঁড়ে
ফেলল, তাতে তিনি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। অথচ এ
প্রশ্ন
দিয়েই তিনি কত তরুণকে নাস্তিক বানিয়েছেন, কত
হুজুরকে ঘোল খাইয়েছেন, অপমান করেছেন!)
ফ্যাকাসে হাসি হাসলেন বাবু।
মাঝবয়সী বাবুঃ বুঝলাম, কিন্তু স্রষ্টা থাকলেই যে,
তাকে মানতে হবে, এমন কোন কথা নেই।
মোল্লাঃ তারমানে, আপনি বলতে চাচ্ছেন, এ
মহাবিশ্ব
তৈরির পেছনে কোন objective নেই?
মাঝবয়সী বাবুঃ না কোন objective নাই।
মোল্লাঃ কেন আপনার এরকম মনে হল?
মাঝবয়সী বাবুঃ Objective থাকলে কি আর
মানবজাতির
মধ্যে এত হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি হত?
যে
যার মত খুশি, চলে। Objective থাকলে কি আর এরকম হত?
মোল্লাঃ (কৌতুকপূর্ণ ভঙ্গীতে) তাহলে তো
নাস্তিকরা মানবজাতির জন্য বড় উপকার করে যেতে
পারে!
মাঝবয়সী বাবুঃ কিভাবে? (সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টি)
মোল্লাঃ যেহেতু নাস্তিকদের জীবনের কোন
অবজেক্টিভ নাই, সেহেতু আপনারা এক কাজ করলেই
পারেন। গণহারে সবাই গলায় দড়ি দিতে পারেন।
এতে
বাংলাদেশের জনসংখ্যার সমস্যার সমাধান হবে।,
আপনারা মরে গিয়ে তেল, গ্যাস হবেন, আমাদের
জ্বালানী সমস্যার সমাধান হবে। পৃথিবীতে
আস্তিক
নাস্তিকের মারামারিও থাকবেনা।
…… তো আপনারা মানবজাতির বিশাআআআআআআল
উপকার
সাধন করতে পারেন।
( এ কথা শুনে সবাই দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগল।
চা
দোকানদারের পান খাওয়া লাল দাঁত ও বেরিয়ে
পড়ল)
মোল্লাঃ কি মামু? তোমার দোকানে না হয় দুই
কাপ চা
কম বিক্রি হবে, মাইন্ড কইরনা।
(দাঁত ৩২ টাই বের হল এবার)
(ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন মাঝবয়সী বাবু)
মাঝবয়সী বাবুঃ ওরে বাপরে! সাড়ে এগারটা
বেজে
গেল। এবার উঠতে হয়, ভাই…
(সবাই মোচড় দেয়া শুরু করল)
মোল্লাঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমাকেও উঠতে হবে……… তা
আপনি
স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করছেন?
মাঝবয়সী বাবুঃ না, আমি সংশয়বাদী, কোনদিন
clear cut
প্রমাণ পেলে করব।
মোল্লাঃ দেইখেন আবার, নিজের সন্তানের
পিতৃত্ব
নিয়ে সংশয়ে থাইকেন না আবার! (বলেই বুঝল
খোঁচাটা
মারা ঠিক হয়নি)
মাঝবয়সী বাবুঃ তা আজ আসি। (বলেই ঘুরলেন, কি
যেন
মনে পড়ে গেলো মোল্লার, ডাক দিলেন………পেছন
ফিরে তাকাল বাবু)
মোল্লাঃ ভাই, আপনার জন্য একটা সুসংবাদ আছে।
মাঝবয়সী বাবুঃ (সন্দেহপূর্ন দৃষ্টি) কি?
(তার চুলের দিকেই কিনা ঠিক বোঝা গেলনা,
শাহাদাত আঙ্গুল তাক করল মোল্লা)
মোল্লাঃ আপনাকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ সুসংবাদ
দিয়েছেন, “ সাবধান! সে যদি নিবৃত্ত না হয়,
তাহলে
আমি তাকে অবশ্যই হেচড়িয়ে নিয়ে যাব, মাথার
সামনের চুল ধরে। মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের চুল!……
অপরাধীর পরিচয় পাওয়া যাবে তাদের চেহারা
দেখে,
তাদের পাকড়াও করা হবে পা ও মাথার ঝুঁটি ধরে”
(কথাটা বলেই ঘুরল মোল্লা…… রাগে কাঁপতে
লাগলেন
মাঝবয়সী বাবু, মোল্লার সাহস দেখে, ব্যাটা আঙ্গুল
তাক
করেছে তার চোখের দিকে, চড়াত করে মাথায় রক্ত
উঠে
গেলো, গায়ে আগুন ধরে গেল, একইসাথে ভয় ও
পেলেন,
তার এতদিনের সাজানো গোছানো যুক্তির
দুনিয়াটা
ভেঙ্গে গেল বলে)
পকেট থেকে টাকা বের করল মোল্লা। তা দেখে
দোকানদার বলে উঠল,
দোকানদারঃ মামু, আন্নেতুন অ্যাঁই টিয়া রাইখলে
আল্লাহ্ও বেরাজি অই যাইব। অ্যাঁরে মাফ করেন,
অ্যাঁই
রাইকতাম হাইত্তান্নো।
(হেঁসে বাসার পথে রওনা হল মোল্লা…… আবেগে
চোখে
পানি এসে গেল তার। ইসলামের জন্য এ উম্মাহ
sacrifice
করবে নাতো কে করবে? তার মনে পড়ে গেল,
ঘূর্ণিঝড়
সিডরের সময়, তারা কয়েকজন মিলে শেখেরটেক ১০
নং
মসজিদ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছিল। যতগুলো
ভিক্ষুক
সেখানে ছিল, প্রত্যেকে নিজের ভিক্ষার টাকা
থেকে দান করে গিয়েছিল…… এ উম্মাহ জাগবে
নাতো
কে জাগবে? এ উম্মাহ আল্লাহর ডাকে সাড়া দিবে
নাতো কে দিবে?)
তিনদিন পর……
সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে হেঁটে
যাচ্ছিল মোল্লা। পকেট থেকে মোবাইল বের
করতেই ভ্রু
কুঁচকে উঠল। পরক্ষনেই হাসি ফুটল মুখে…
মোল্লাঃ আসসালামু আলাইকুম!
অপরপ্রান্তঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম,……… হ্যালো, ভাই,
……
চিনতে পারছেন আমাকে?
মোল্লাঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ, পারছি…… বলেন।
অপর প্রান্তঃ আপনি কি ফ্রী আছেন ভাই?
মোল্লাঃ আ………হ, মোটামুটি, বলেন।
অপরপ্রান্তঃ না, তাহলে একটু কথা বলতাম আর কি!
মোল্লাঃ আপনি কই আছেন?
অপর প্রান্তঃ তাজমহল রোড।
মোল্লাঃ এক কাজ করেন, মেগা সিটির পিছনের
মাঠে
চলে আসেন। আমি আসতেছি, ১০ মিনিট।
”রব্বিশ রহলী সোয়াদরী ওয়া ইয়াসসিরলী আমরি,
ওয়াহলুল উকদাতাম মিল্লিসানী ওয়াফক্বহু ক্বলী”
তিন বছর পর……
রাত তিনটা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি
প্রকোষ্ঠে শিক ধরে দাঁড়িয়ে আছে রুম্মান।
ফাঁকফোকর
দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ছে। আজ ভরা পূর্ণিমা।
বিগত তিন বছরের স্মৃতি মনে পড়ে গেল রুম্মানের।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের ঢাকা
সফরের প্রতিবাদে মিছিলে গিয়েছিল সে।
নির্লজ্জ
পেটোয়া বাহিনীর বেধড়ক লাঠিপেটার স্মৃতি
ভেসে
উঠল। ভেসে উঠল মোল্লার মাথা ফেটে অজ্ঞান
হয়ে
যাওয়ার ছবি। রক্তাক্ত দেহে ফুটপাতেই পড়ে ছিল।
চারদিকের স্লোগান, ”গণতন্ত্রের কবর খুঁড়,
খিলাফতের
জন্য লড়; মুজিব জিয়ার আদর্শ, দেশ করেছে ধ্বংস;
সারা
জাহান জাগছে, খিলাফত আসছে”………। তিনজন পুলিশ
যখন
তাকে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিয়ে যাচ্ছিল,
ততক্ষণে
পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর তাণ্ডবে নরক হয়ে
পড়েছিল
প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তা…। সেই সাথে
সরকারী
বাহিনীর তান্ডব।
তারপর থেকে তিন বছর…… হ্যাঁ, তিনটা বছরই তো। এমন
কোন
নির্যাতন নেই, যা তার উপর করা হয়নি। ইলেক্ট্রিক
শক
দিয়ে দিয়ে তার যৌনক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া
হয়েছে……
বিয়ে? হাহ? মোল্লার সাথে বিয়ে নিয়ে প্রায়ই
কথা
হত, ও বলত, খিলাফত আসলে ৪ টা বিয়ে করবে, আরব
থেকে
একটা, ইরান থেকে একটা, ইউরোপ থেকে একটা আর
কাশ্মির থেকে একটা……ওয়ারড্রবের সমান সাইজের
স্পীকার এনে তাদের কয়েকজনকে একটা রুমে আটকে
ছেড়ে দেয়া হয়েছিল ঢাকা ব্যান্ড এর সেই কুখ্যাত
গান,
“লাকুম দিনিকুম ওয়ালিয়া দীন”……টানা ২৪ ঘণ্টা……
পরের
এক সপ্তাহ মাথায় শুধু একটা কথাই বাজত “লাকুম
দিনিকুম
ওয়ালিয়া দীন’’চোখটা ভিজে উঠল রুম্মানের…
কয়েকজনের কান ফেটে রক্ত বেরিয়ে অজ্ঞান হয়ে
পড়ে
ছিল…
ছোট বোনটার ম্যাট্রিকের রেজাল্টটাও জানা
হলনা,
কোন আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব কাউকেই দেখা করতে
দেয়া হয়নি তার সাথে, এই তিন বছরে। ……আর ছোট্ট
শিলু!
বাইরে থেকে বাসায় গেলেই, উদোম গায়ে, diapers
পরে থপ থপ দৌড়ে চলে আসত তার কাছে। একটা
চকোলেটের আশায় তাকিয়ে থাকত ভাইয়ের
দিকে,
চকোলেটটা দিয়েই তার তুলতুলে হাতে আলতো
করে
কামড় বসিয়ে দিত রুম্মান। ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরত
ছোট্ট শিলু……
শরীর আর পারছেনা…… নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে
থাকা
আর গার্ল ফ্রেন্ডের হিপ বোন মাপা তরুণদের বুঝা
উচিৎ,
তাদেরকে নিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা কি ভয়ংকর
পরিকল্পনায়ই না মেতে উঠেছে। এই বৃত্ত থেকে
বেরিয়ে আসা হাজারো তরুণের আত্মত্যাগের কথা
“আংশিক নয়, পুরো সত্য” এর দাবীদার রুপার্ট
মারডকদের
মিডিয়ায় কখনই উঠে আসেনা…… ইসলাম এত সহজে
আমাদের বাপ দাদাদের কাছে আসেনি, এত সহজে
পরবর্তী জেনারেশনের কাছেও যাবেনা।
Brainwash! আক্ষেপের হাসি ফুটল রুম্মানের ঠোঁটের
কোণায়। হ্যাঁ Brainwash ই বটে! Secular এই সমাজের
নোংরা আবর্জনা ভরা মাথাটাকে তো ধোওয়ার
দরকারই ছিল। মোল্লা সে কাজটাই করেছে। মনে
পড়ে
গেল, মেগা সিটির মাঠে আলোচনা শেষ করে
উঠার
সময়……আবেগে তার শরীর কাঁপছিল…… মোল্লা
জিজ্ঞাসা করল “তোমার ঝুঁটি কোথায়?” …… সে
বলেছিল, “Live for Allah, Die for Allah”…….. দরদর করে চোখ
দিয়ে পানি পড়ছিল মোল্লার। একজন আরেকজনকে
বুকে
জড়িয়ে ধরল, মোল্লার সেই চাপ আজও বুকে লেগে
আছে…… ভ্রাতৃত্বের চাপ, Bond of Brotherhood!
ও আল্লাহ! আর পারছিনা…… খিলাফত না দেখিয়ে
মৃত্যু
দিওনা…… হঠাৎ অন্তরে এক গভীর প্রশান্তি অনুভব করল
সে………হা হা… “তেরা…মেরা… রিশতা…
পুরানা…’’……
তাহাজ্জুদের সময় হয়ে এল।
তাহাজ্জুদের দ্বিতীয় সিজদা যখন দিল, তার
ঠোঁটের
কোণে ছিল হাসির রেখা। ফজরের আযান যখন শুনা
গেল,
তখনও ওভাবেই ছিল সে…… ঠোঁটের কোণে হাসির
রেখা……
…ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
(আর এভাবেই শুরু হল, ইসলামের পক্ষে, খিলাফতের
পক্ষে
এক অভূতপূর্ব জাগরণের। গুম, হত্যা, নির্যাতন, অপবাদ
কোন
কিছুই রুখতে পারছেনা রুম্মানের মত এরকম শত সহস্র
তরুণের
আদর্শিক জাগরণকে……… ইসলাম অপেক্ষায়, গণতন্ত্রকে
ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করার……)
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুআল্লাহু আকবার আল্লাহু
আকবারওয়া লিল্লাহিল হামদ।



Source: www.facebook.com/dashottomona
Thanked by: Tanvir Hossain

Comments

Popular posts from this blog

L’uomo Che Aveva Paura del Genere Umano (Riassunto)

বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র -ছাত্রীরা

Marriage Advices to You All (by_Tanvir_Sci)