ধর্ম ও বিজ্ঞান : একটি তুলনামূলক আলোচনাReligion and Science comparative analysis :

বিশ্বাস (Belief) এবং বিজ্ঞান (Science) - এই দুইটি সাবজেক্ট একটি লম্বা লাঠির দুই বিপরীত প্রান্তের-ই এক অন্যরকম প্রতিচ্ছবি। বিশ্বাস একটি ব্যাসিক সাবজেক্ট। অন্যদিকে বিজ্ঞান হচ্ছে একটি সেকেন্ডারি সাবজেক্ট। বিশ্বাস ব্যাপারটি সম্পূর্ণভাবেই ধর্মের সাথে সংযুক্ত। আর বিজ্ঞান হচ্ছে যুক্তিতর্কভিত্তিক টার্ম। বিজ্ঞান কখনোই বিশ্বাস তথা ধর্মীয় বিশ্বাস এর মাপকাঠি হতে পারে না। আই রিপিট, বিজ্ঞান কখনোই বিশ্বাসের মাপকাঠি হতে পারে না।
ছোট্ট একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি।
 তিনটি সেমোটিক জাতির ( ইসলাম, ইহূদী ও খ্রিষ্টান ) মধ্যে একমাত্র খ্রিষ্টানরা-ই শূকর ভোজী। শূকরের মাংসে 'ট্রাইচিনেলা স্পাইরেলিস' (Trichinella spiralis) নামের একধরনের সুতাকৃমির শুককীট পাওয়া যায়। মাংস যত ভালোভাবেই সিদ্ধ করা হোক না কেনো, এই শুককীট গুলোকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা যায় না। তাই শূকরের মাংস খেলে উক্ত শুককীটগুলো মানুষের শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং "ট্রাইচিনিয়াসিস" নামক কৃমিরোগ এর সংক্রমণ ঘটায় যা অনেক সময় মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান বিশ্বে প্রগতিশীল দেশ হিসেবে পরিচিত কানাডা, আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং কিছু ইউরোপীয় কান্ট্রিগুলোতে কেবলমাত্র শূকরের মাংস খাওয়ার জন্যই অনেক মানুষ "ট্রাইচিনিয়াসিস" রোগে আক্রান্ত হয়। তবে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই রোগ ভয়াবহভাবে সংক্রমিত হতে থাকে। ১৯৫২ সালের মে মাসের ৩১ তারিখে আমেরিকার বিখ্যাত পত্রিকা The Washington Post এ ডা: প্লেন শোফার্ড শূকরের মাংস ভক্ষণের বিপদ সম্পর্কে মন্তব্য করে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছিলেন : আমেরিকা ও কানাডার প্রতি ছয়জন ব্যক্তির একজনের মাংসপেশীতে "ট্রাইচিনিয়াসিস" রোগের জীবাণু বিদ্যমান। এরও আগে ১৯৪৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা কর্তৃক প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিন এর ৭৭ পৃষ্ঠায় ডা: এস পোল্ড বলেছেন, " মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে শতকরা ২৫ থেকে ৩৫ জন মানুষ তাদের দেহে ট্রাইচিনেলা জীবাণু নিয়ে বাস করছে "। বিশ্ববিখ্যাত চীনা মুসলিম চিন্তাবিদ অধ্যাপক ইব্রাহীম টি ওয়াই মা তদ্বীয় রচিত " Why Muslims Abstain From Porks " প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, শূকরের মাংস খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার পর তা শরীরের পুরাতন ব্যাধি-সমূহকে জীবন্ত করে তোলে। বাত রোগ ও হাঁপানী রোগের তীব্রতা ও স্থায়িত্বকাল বাড়িয়ে দেয়। স্মরণশক্তি দুর্বল হওয়া এবং মাথার চুল পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি করে।
উপরের তথ্যগুলো মানুষ সম্প্রতি জানতে পারলেও শূকরের মাংসের ক্ষতিকর দিকগুলোর অস্তিত্ব কিন্তু প্রথম থেকেই ছিলো। এখন আপনি যদি বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করেন তবে আজ থেকে ১৪০০-৩০০ বছর পূর্বে শূকরের মাংশ খেতে আপনার কোনো বাঁধা থাকার কথা না। কেননা বিজ্ঞান তখনও শূকরের মাংস ভক্ষণের ফলে সংঘটিত ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে আপনাকে কোনো ধারণা দিতে পারে নি। কিন্তু বিজ্ঞান ব্যাখ্যা দিতে পারে নি তার মানে এই না যে তখন শূকরের মাংস খেলে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না। অবশ্যই হতেন।
কিন্তু ইসলাম ধর্মে শূকরের মাংস খাওয়া হারাম। কুরআন মাজীদে একবার নয় দুইবার নয়, চারবার শূকরের মাংস খেতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আর রাসূলের (সা) হাদিস তো আছেই।
এখন ১৪০০ বছর আগে আপনি যদি বিজ্ঞানকেই প্রাধান্য দিতেন তবে শূকরের মাংস ভক্ষণ করায় আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাস ( আমি এখানে ধর্ম বলতে বেসিক্যালি ইসলাম ধর্মকে-ই বুঝাচ্ছি; ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তো প্রকৃতপক্ষে কোনো ধর্ম-ই না ) এর নিরীখে বিবেচনা করলে আপনি শূকরের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা রোগাক্রান্ত হতেন না।
 এখানেই বিশ্বাসের সাথে বিজ্ঞানের তফাত। "Argumentum ad populum" তত্ত্ব ধর্মীয় বিশ্বাসে খাটে না। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দোহাই এখানে অচল। আপনার আশেপাশের কেউই বিশ্বাস করে না তবুও আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে যদি আপনি একবার নিজেকে ধর্মের অনুসারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সঠিক ধর্মের খোঁজে আপনি যুক্তিতর্ক ব্যবহার করতে পারেন। তবে সঠিক ধর্ম খোঁজে পাওয়ার পর এবং তার অনুসারী হওয়ার পর ঐ (ইসলাম) ধর্মের সকল নিয়মকানুন কোনো রকম প্রশ্ন কিংবা যুক্তিতর্ক ছাড়াই মেনে চলতে আপনি বাধ্য।
ইসলাম ধর্মের কোনো কিছুই মানুষের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে অদ্যাবধি প্রমাণিত হয় নাই। হবেও না কখনো। মহাবিশ্বের স্রষ্টা সয়ং এই ধর্ম অনুসারে মানুষকে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। ধরুন আই মিন কল্পনা করুন, ঘটনাক্রমে আপনি ইসলাম ধর্মে ক্ষতিকারক কিছু একটা খুঁজে পেয়েছেন ( যদিও তা সম্ভব নয়, তবুও একটু কল্পনা করুন )। কিন্তু তারপরও আপনাকে ঐ ক্ষতিকর ব্যাপারটি-ই মেনে নিতে হবে, আমল করার হলে আমল করতে হবে, তাতে আপনার যে কোনো ধরণের ক্ষতিই হোক না কেনো। কেনো জানেন? কারণ খুবই সহজ। আল্লাহ্ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তাই আমরা তার চাকর। তিনি যা বলবেন তা আমাদের মেনে নিতেই হবে। ক্ষতি কিংবা লাভের কথা বিবেচনা করা যাবে না। তবে আল্লাহ ক্ষতিকর কোনো কিছুর নির্দেশ কখনোই দিবেন না। কেননা তা আল্লাহর নীতিবিরুদ্ধ।
আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে রাসূলের (সা) সাহাবীরা (রা) ইসলাম ধর্মের রীতি-নীতি নিয়ে খুব একটা প্রশ্ন উত্থাপন করতেন না বললেই চলে। তাঁরা হযরত মুহাম্মদ (সা) এর মুখে শুনতেন এবং মেনে নিতেন। সেটা কিন্তু আমাদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য।
আমরা জানলাম এবং মেনে নিলাম।
 আমরা পড়লাম এবং মেনে নিলাম।
 আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।
writer: Tanvir Ahmed
thanked by: Tanvir Hossain

Comments

Popular posts from this blog

L’uomo Che Aveva Paura del Genere Umano (Riassunto)

বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র -ছাত্রীরা

Marriage Advices to You All (by_Tanvir_Sci)