সেলফি আসক্তি এবং ফেবুতে ফটো আপলোড নিয়ে কিছু কথা!Selfie-taking Addiction & FB photo uploading Cauti((

ডানি বাউমান, ১৯ বছর বয়সী এক বৃটিশ তরুণ ৷ ১০ ঘন্টা ধরে ২০০ বার চেষ্টা করছিলো একটা সুন্দর সেল্ফী তোলার, যা উঠল তা তার মনঃপুত হলো না ৷ স্কুল ছেড়ে সে ছয় মাস নিজেকে বাড়ির মধ্যে আটকে রাখলো ৷ কোথাও বের হলো না । প্রতিদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই ১০টা স্ন্যাপ নেয় । ৩০ পাউন্ড ওজন কমানোর পরেও একদম মনমত সেল্ফী না পেয়ে সে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় ৷
 এক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০১৪-১৫ সালে সারাবিশ্বে ১২৭ টি সেল্ফী সংক্রান্ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৷ এর মাঝে ৭৬ টিই সংঘটিত হয়েছে ভারতে । যার জন্য সেদেশের পুলিশ ১৫ টি স্থানকে "সেল্ফী তোলার জন্য বিপদজনক" এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে ।
 বাংলাদেশও মুক্ত নয় সেল্ফী জনিত দূর্ঘটনা থেকে ৷ পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গত বছর বিবাড়িয়ায় সেল্ফী তুলতে গিয়ে দু'কিশোর ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে, এবছর বরগুনার ইকো পার্কে সেল্ফী তোলার সময় এক যুবক কুমিরের আক্রমণের শিকার হয়ে প্রাণ হারায় ৷ এগুলো দূর্ঘটনা, না বোকামী তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে ৷
 ডানি বাউমান স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে গেলেও নিজের অজান্তেই আমরা অনেককে ঠেলে দিচ্ছি আত্মহত্যার মুখে ৷ মাস ছয়েক পূর্বে এক মেয়ে মেসেজ দিয়ে বললো, তার ছবি এবং নাম দিয়ে কেউ ফেইক আইডি খুলছে ৷ আমি তাকে বললাম, বিষয়টা তার পরিবারকে জানাতে ৷ কিন্তু তার পরিবারকে জানাতে ভয় পাচ্ছে, কারন পরিবার জানে না সে ফেসবুক ব্যবহার করে ৷
 আরেকটা অভিযোগ এসেছিলো অন্যজন থেকে ৷ ইনবক্সে তাকে প্রতিদিনই ছেলেরা ডিস্টার্ব করে ৷ এর মাঝে এক বিদ্রোহী প্রেমিক সেল্ফীগুলো এডিট করে ফেরত পাঠিয়েছে ৷ যদি তার প্রস্তাবে রাজি না হয় তাহলে সে ছবিগুলো ১৮+ পেজে দিয়ে দিবে ৷
 আরেকজন কলেজে পড়া অবস্থায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরল মনে বন্ধুদের সাথে গ্রুপ ছবি তুলেছিলো ৷ বিয়ের পর বন্ধুদের মাঝে কোন এক প্রণয়প্রার্থী তার বরের হাতে ছবিগুলো ধরিয়ে দেয় ৷ এটা নিয়ে এখন তাকে উঠতে, বসতে মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে ৷
 এক ফিল্মে ৩৫ স্ন্যাপের ব্যয়বহুল এনালগ যুগেও অনেক মেয়ের সুন্দর জীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছিলো ফটো এডিটের কারনে ৷ ঐ সময়ে সবাই সতর্ক থাকত পারিবারিক ছবি, বিশেষ করে পরিবারের মেয়ে সদস্যদের ছবি যেন অপরিচিত কারো হাতে না পড়ে ৷ সে সময়ের নিরক্ষর অভিভাবকগণ এসব বিষয়ে যতটা সচেতন থাকতেন, এখনকার অবাধ স্বাধীনতার ডিজিটাল যুগে শিক্ষিত অভিভাবকরা সম্পূর্ণ উদাসীন এসব ব্যাপারে ৷ যার খেসারত দিতে হয় তাদের সন্তানদেরকে ৷
 পুরুষরা যে একেবারেই নিরাপদ এসব থেকে তা নয় ৷ এইতো কিছু দিন আগে এক ভদ্রলোকের বৃদ্ধ মানুষের ঘাড়ের উপর বসে ফোন করা একটা ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে ৷ পরবর্তীতে দেখা গেলো ভদ্রলোক একজন স্কুল শিক্ষক ৷ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কেউ এমনটা করেছে ৷ প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির দায়ে এক ভদ্রলোককে গ্রেফতার করার জন্য অনলাইনে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় ৷ গ্রেফতারের পর দেখা গেলো ভদ্রলোক একজন নও মুসলিম এবং তাকে ফাঁসানো হয়েছে ৷ যথাসম্ভব তিনি এখনো শ্রীঘরে ৷
 মনোবিজ্ঞানীদের মতে সেল্ফী এবং ঘন ঘন ছবি তোলা এক ধরনের মানসিক রোগ ৷ এগুলো ঠিক কি ধরনের মানসিক রোগ এবং কিভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন ৷ লিও টলস্টয়ের মতে, "জগতের সব মানুষের মাঝেই মানসিক রোগ আছে ৷" তবে সব মানুষ কিন্তু মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে ছবি তুলছেন না ৷ অনেকে প্রিয় মুহূর্তগুলোকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ও ছবি তুলে থাকেন ৷
 প্রিয় মুহূর্তগুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার জন্যও অনেকে ছবি আপলোড করে থাকেন ৷ কিন্তু ফ্রেন্ডলিস্টের সবাইতো আমাদের বন্ধু না ৷ মনের মাঝে অপরাধের সুপ্ত বাসনা কেউ কেউ লুকিয়ে থাকে ৷ এসব অপরাধীদের দমন করার জন্য সাইবার ক্রাইম দমন আইন আছে ৷ আইন করে সাধারণত অপরাধ দমন করা যায় না, যদি নৈতিকতা না থাকে ৷
 প্রয়াত অভিনেতা আবুল কাশেম মিঠুন বলেন, "আমি যখন দেখলাম আমি আমার মেয়ে বা স্ত্রী কে অন্য পুরুষের সাথে অভিনয় করতে দিতে পছন্দ করি না; তখন ভাবলাম আমি কেন তাহলে অন্যের স্ত্রী, মেয়ের সাথে অভিনয় করবো? আমি অভিনয়টা ছেড়ে দিলাম ৷"
অনেক ইসলামিস্ট ভাইদের দেখা যায় ফেসবুকের লেখাগুলো ঊনারা ছুঁয়েও দেখেন না, কিন্তু মেয়েদের ছবিতে, ইনবক্সে হামলে পড়েন ৷ সেসব ইসলামিস্ট ভাইয়েরা ঊনাদের পরিবারের মেয়েদের সাথে কারো এমন আচরণ পছন্দ করেন কি? অনলাইনে বা অফলাইনে মেয়েদের সাথে তেমন আচরণ করুন, অন্যের কাছ থেকে আপনার পরিবারের মেয়েদের প্রতি যেমন আচরণ পছন্দ করেন ৷
 অনেকে বোন আছেন ফেসবুকে ছবি আপলোড করে, নিজের সৌন্দর্য্যের জানান দিতে চায় ৷ লাাইলীকে দেখে একলোক বলেছিলো, "তুমি তো অন্যান্য মেয়েদের মতো সুন্দরী নও; তাহলে তোমার প্রেমে মজনু পাগল হলো কীভাবে?’' জবাবে লাইলী বললো, "আপনার কাছে মজনুর চোখ নেই । আপনার কাছে যদি মজনুর চোখ থাকত, তাহলে আপনার দৃষ্টিতে আমার চেয়ে আর কেউ সুন্দরী হত না ৷"
আসলে সৌন্দর্য্যের নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই ৷ কালো-কুৎসিত মেয়েটিও তার পিতা-মাতার কাছে রাজকুমারী ৷ সহজ সরল চরিত্রবান মেয়েটিও তার শত্রুদের কাছে চরিত্রহীন ৷ এটি নির্ভর করছে যার যার দৃষ্টি ভঙ্গির উপর ৷ আমাদের সৌন্দর্য্য নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্য ৷
 যারা চেহারা দেখিয়ে পয়সা উপার্জন করে থাকে, আমাদের মিডিয়া তাদের মডেল বলে ৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফটোসেশন বাবত এরা নির্দিষ্ট পরিমাণ পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে ৷ বরপক্ষ যখন কোন মেয়েকে দেখতে আসে, তখন কিছু না কিছু নজরানা দিয়ে থাকে ৷ কিন্তু ফেসবুকে অনেক বোন নিজেকে উপস্থাপন করছে বিনা মূল্যে ৷ নিজের অজান্তেই তারা নিজেদেরকে নিজেরা সস্তা করে তুলছে!
আমি কাউকে ছবি তুলতে বা আপলোড করতে নিষেধ করছি না, শুধু সাবধান হতে বলছি ৷ আপনার ছবিগুলো কি শুধু আপনার পরিবার বা বন্ধুদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকছে, নাকি চলে যাচ্ছে কোন দুষ্কৃতিকারীর হাতে? ডানি বাউমান আত্মহত্যা করতে গিয়েও বেঁচে গেছে ৷ কিন্তু লাকসামের নাম না জানা
 স্কুল পড়ুয়া মেয়েটি বাঁচতে চেয়েও বাঁচতে পারে নি ৷ শখের বসে মেয়েটি ফেসবুকে ছবি আপলোড দিয়েছিলো কিন্তু সে ছবিগুলো দুষ্কৃতিকারীদের হাত ধরে ছড়িয়ে গিয়েছিলো বিভিন্ন এ্যাডাল্ট পেজে ৷ লজ্জায়, ঘৃণায় আত্মহত্যার মাধ্যমে মেয়েটিকে ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে ৷
 লেখা- সায়েদুর রহমান
Thanked by: Tanvir Hossain

Comments

Popular posts from this blog

L’uomo Che Aveva Paura del Genere Umano (Riassunto)

বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র -ছাত্রীরা

Marriage Advices to You All (by_Tanvir_Sci)